Friday, May 25, 2018

‘সাঞ্জু’ হতে চেয়েছিলেন আমির খান!

ট্রেলার দিয়েই বাজীমাত করেছে ‘সাঞ্জু’। বলিউড তারকা সঞ্জয় দত্তের জীবনী নিয়ে রাজকুমার হিরানী নির্মাণ করেছেন সিনেমা, আর সেখানে সঞ্জয় রূপে আবির্ভূত হয়েছেন রনবীর কাপুর- সেটা তো সবাই জানেন। সঞ্জয়ের চরিত্রের ভেতরে কি দারুণভাবে ঢুকে গিয়েছেন রনবীর, সেটাও ট্রেলারে দেখা গেছে, প্রমাণ মিলেছে স্থিরচিত্রগুলোতেও। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না, এই সিনেমায় অভিনয় করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল বলিউড সুপারস্টার আমির খানকেও! সাঞ্জু’র চরিত্রে নয়, তার বাবা সুনীল দত্তের চরিত্রে আমিরকে চেয়েছিলেন হিরানী। কিন্ত স্ক্রীপ্ট পড়ে সঞ্জয়ের চরিত্রটাকেই সবচেয়ে পছন্দ হয়েছিল তার। একারণে সুনীল দত্তের চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাবটা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মিস্টার পারফেকশনিস্ট।
গতকাল মুম্বাইয়ে একটা বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে এসেছিলেন আমির খান আর রাজকুমার হিরানী। সেখানেই জানা গেল এই ‘গোপন’ সংবাদ। সাঞ্জু’র ট্রেলারে স্বাভাবিকভাবেই মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন আমির। হাসতে হাসতেই তিনি বললেন, “এই চরিত্রটা আমারও ভীষণ পছন্দ হয়েছিল। রাজু(রাজকুমার হিরানী) যখন আমাকে স্ক্রীপ্টটা দিয়ে প্রস্তাব দিলো অভিনয়ের, সেটা পড়ে আমি ভীষণ মুগ্ধ হয়েছিলাম। ও চাইছিল আমি যাতে দত্ত সাহেবের(সুনীল দত্ত) চরিত্রটা করি। বাবা-ছেলের সম্পর্কটা বিশাল ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখানে। এই চরিত্রটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সিনেমাতে। কিন্ত সঞ্জয়ের চরিত্রটা ছিল অবিশ্বাস্য। একবার সেটার ওপরে চোখ পড়লে বাকী সবকিছু পানসে মনে হবে।”
“আমি রাজুকে বলেছিলাম, সাঞ্জু চরিত্রটা আমার অসম্ভব পছন্দ হয়েছে। এটা সত্যিই অসাধারণ। তাই এই সিনেমায় যদি আমি অভিনয় করি, এই রোলটা ছাড়া অন্য চরিত্রগুলো আমার কাছে পানসে মনে হবে। কিন্ত সাঞ্জু তো আমি করতে পারবো না, কারণ সেখানে তুমি ইতিমধ্যে রনবীরকে নিয়েছো। তাই আমাকে অন্য কোন চরিত্র অফার করার দরকার নেই।”
সঞ্জয় দত্তের ক্যারিয়ারে নতুন জীবন দিয়েছিলেন রাজকুমার হিরানী। জেল থেকে বেরিয়ে সঞ্জয় তখন মোটামুটি হারিয়ে গেছেন বলিউডের মানচিত্র থেকে।তখন সঞ্জয়কে নিয়ে মুন্নাভাই এমবিবিএস বানিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন হিরানী। বলিউডের দর্শকেরা মুন্নাভাই হিসেবে সঞ্জয়কে যেভাবে গ্রহণ করেছিল, সেভাবে আর কোন চরিত্রেই বোধহয় করেনি। এরপরব সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে মুন্নাভাইয়ের দ্বিতীয় কিস্তি ‘লাগে রাহো মুন্নাভাই’ও নির্মাণ করেছিলেন হিরানী। এবার তো সঞ্জয়ের জীবনটাকেই তিনি তুলে আনছেন সিনেমায়।
‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমাটা দিয়ে আমির খানের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন হিরানী। সেই একটা সিনেমাই বলিউডে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল বলিউডে। বক্স অফিসের রেকর্ড ভেঙে করেছিল চুরমার। এখনও থ্রি ইডিয়টস দেখতে বসলে মনেই হয় না আগে দেখেছি, প্রতিটা দৃশ্য নতুনের মতো লাগে। এরপরে ‘পিকে’ নিয়ে এসেছে এই জুটি। সেটাও দর্শকের মন জয় করেছে, রেকর্ড গড়েছে বক্স অফিসে। তবে হিরানী এবার নতুন জুটি গড়েছেন রনবীরের সঙ্গে। আর ট্রেলার এবং স্থিরচিত্র দেখার পরে সবাই একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন, সঞ্জয়ের চরিত্র রনবীরের চেয়ে ভালোভাবে কেউ অনুকরণ করতে পারতেন না।
আমির অবশ্য ‘সাঞ্জু’ হতে না পারায় একটুও মন খারাপ করেননি। বরং তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন সিনেমাটা দেখার জন্যে। সাঞ্জু হিসেবে রনবীর দুর্দান্ত কিছু করবেন বলেই তার বিশ্বাস, রনবীরকে দারুণ অভিনেতা বলেই স্বীকৃতি দিয়েছেন তিনি।
সঞ্জয় দত্তের বাবা প্রয়াত অভিনেতা সুনীল দত্তকে নিয়েও কথা বলেছেন আমির খান। খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল দুজনের, সুনীল দত্তকে নিজের সত্যিকার শুভাকাঙখী হিসেবেও মানেন আমির। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেছেন- “সুনীল আঙ্কেল আমাকে নিয়মিতই টেলিগ্রাম পাঠাতেন, ঈদ-পূজা-নতুন বছর, সব উপলক্ষ্যতেই। যখন আমার সিনেমা ভালো করতো, তখন নিজে থেকেই ফোন করতেন আমাকে, ভীষণ খুশী হতেন তিনি।”
“একটা রাতের কথা আমি স্পষ্ট মনে করতে পারি। ১৯৯৩ সালে দাঙ্গা শুরু হয়েছে। হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে আমরা কয়েকজন ভাবলাম, এটা বন্ধ করার জন্যে সরকারকে চাপ দিতে হবে। প্রায় চল্লিশজন মানুষ মূখ্যমন্ত্রীর অফিসে গেলাম, কিন্ত উনি আমাদের সরাসরি কোন আশ্বাস দিলেন না। আমরা কয়েকজন ঠিক করলাম, এভাবে চলতে দেয়া যাবে না। আমরা তখন মন্ত্রণালয়ে মহাত্মা গান্ধীর ভাস্কর্যের নীচে দাঁড়াবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম।”
“সেদিন রাতে আমরা শুধু চারজন ছিলাম। যশ চোপড়া, জনী ওয়াকার, সুনীল আঙ্কেল এবং আমি। পরদিন তো আরও অনেকেই যোগ দিয়েছিল আমাদের সঙ্গে। সেই রাতে অনেক গল্প শুনেছিলাম ওদের কাছে। সিনেমার গল্প, সিনেমার বাইরে জীবনের গল্প। সেই রাতের স্মৃতিটা আমি কখনও ভুলবো না। আমার দেখা শ্রেষ্ঠ ভদ্রলোকদের একজন ছিলেন সুনীল দত্ত।”
তথ্যসূত্র- হিন্দুস্তান টাইমস

No comments:

Post a Comment

Followers