তাজিন আহমেদ। একসময়ের বেশ জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর মৃত্যুর খবরতো আমাদের অজানা নয় কিন্তু আমরা কি জানতাম তার অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কথা?
কেউ জানতেন কি না জানিনা তবে আমি জানতামনা। তিনি এতোটাই আর্থিক অনটনে ছিলেন যে তার মায়ের জন্য মাত্র ৫০০ টাকা দিয়ে খাবার কিনে জেল হাজতে পাঠাতে পারতেননা!
অহ উল্লেখ্য যে, তাজিনের আহমেদের আম্মা প্রায় দু'বছর ধরে কোনো এক চেক ডিজঅনার মামলায় জেল খাটছেন। উনার মাকে নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই আমার প্রশ্নটা অন্যখানে।
মিডিয়ার লোকেদের চাকচিক্যময় জীবন দেখে তো মনে হয়না তাদের এতো অভাব অনটন যে, একজন সহকর্মীকে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করার ক্ষমতা নেই। তারপরেও কেন আমরা প্রায় সময় পত্রিকায় পাতায় কিংবা অনলাইন দুনিয়ায় দেখি মিডিয়ার অমুক শিল্পী টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেননা, তমুক শিল্পীর মাথাগোঁজার ঠাই পর্যন্ত নেই কিংবা অমুক শিল্পী জনগণের কাছে হাত পেতে সাহায্য চাইছেন ইত্যাদি ইত্যাদি।
সহকর্মী কিংবা যেকোনো মিডিয়ার কারো দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থাকে এড়িয়ে গিয়ে যারা দামী গাড়ী হাঁকিয়ে বেড়ান, বিলাসবহুল বাড়ীর এসির নীচে রঙ্গতামাশা করেন আর দামিদামি রেস্টুরেন্ট কিংবা শুটিং স্পটে গিয়ে চ্যাক ইন দেন তাদের উপলব্ধি করা উচিৎ যে, সময় কিন্তু আচমকাই পাল্টে যায়। এই পাল্টে যাওয়া সময় কতোখানি অনুকূল বা প্রতিকূলতা নিয়ে আসতে পারে সে ধারণা করা মুস্কিল।
পপগুরু আজম খানের কথা কি ভুলে গেলেন? ভুলে গেছেন কি খালিদ হাসান মিলুদের কথা? আরো অসংখ্য এমন নাম আছে যে নামের তালিকায় নতুন করে স্থান করে নিয়েছেন তাজিন আহমদ। তালিকাটা কিন্তু আরো দীর্ঘ হবার সম্ভাবনা খুব বেশী। সুতরাং সময় থাকতেই সহমর্মিতার অভ্যেস গড়ুন। সহকর্মী বা মিডিয়ার যেকোনো ব্যক্তির দুঃসময়ে পাশে দাঁড়াবার মানসিকতা তৈরী করুন। আপনারা আমাদের বিনোদন দেন তাই আপনাদের আমরা ভালোবাসি। ভালোবাসার মানুষগুলির এত নির্মম আর অসহায় অবস্থার কথা ভাবলেও কষ্ট লাগে খুব।
শেষ করবার আগে সেইসব ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে কিছু প্রশ্ন- আচ্ছা আপনারা এখন যারা তাজিন আহমেদের দুর্দশার কথা ইনিয়েবিনিয়ে প্রকাশ করছেন তখন কোথায় ছিলেন? আপনাদের এতোই যদি অক্ষমতা, এতোই যদি দৈন্যতা ছিলো সাহায্যের জন্য তাহলে এদেশের জনগণকে জানাতেন।
জনগণের উদারতার অসংখ্য উদাহরণ নিশ্চই আপনাদের অজানা নেই। বাংলাদেশের সামর্থ্যহীন কিন্তু উদার মনের মানুষগুলি সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কোটি টাকা দিয়েও মানবতার হাত বাড়িয়েছে বিভিন্ন সময়।
গোটা মিডিয়ার কাছে অনুরোধ তাজিন আহমেদের মতো এরকম পরিস্থিতিতে যারা চক্ষুলজ্জায় কিংবা ব্যক্তিত্বের তাড়নায় তিলেতিলে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছেন দেখবেন আপনারা তাদের সাহায্য করুন আর নাই করুন অন্তত অবস্থানটা প্রকাশ করতে কার্পণ্য করবেননা। আপনারা মিডিয়ার মানুষদের অনেকেই আমাদের শৈশব, কৈশোর থেকে বর্তমানের অনেকটা স্থান দখল করে আছেন। মন খারাপা কিংবা একাকীত্বসহ বিভিন্ন জটিল সময় আমরা আপনাদেরই কারো গান শুনে, অভিনয় দেখে মোটকথা বিনোদন নিয়ে ভালো থাকি তাই আপনাদের মঙ্গলই তো আমাদের প্রত্যাশা জুড়ে থাকবে। ভালো থাকুন এপারের সবাই আর অপারেও ভালো থাকুন তাজিন আহমেদ।
No comments:
Post a Comment